ঢাকা , শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫ , ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে গ্যাস রিজার্ভে টান

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ২৩-০১-২০২৫ ১২:৩১:২৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৩-০১-২০২৫ ০১:০৮:৪৩ অপরাহ্ন
দেশে গ্যাস রিজার্ভে টান
একসময় বলা হতো বাংলাদেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে। সে কথা এখন কেবলই সোনালি অতীত। দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের রিজার্ভে টান পড়তে শুরু করেছে। দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে গ্যাসের মজুত তথা উৎপাদন। বর্তমানে যে মজুত আছে তা দিয়ে বড় জোর ১০ থেকে ১২ বছর সময় চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থলভাগে নতুন করে বড় কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হওয়ায় এবং পুরনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসায় প্রাকৃতিক গ্যাসের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্টরা|

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সাগরে জ্বালানি অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকলেও কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান এতে সাড়া দেয়নি। যা পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তুলছে। এই অবস্থায় দুশ্চিন্তায় আছেন দেশের ব্যবসায়ী মহলও। কারণ প্রাকৃতিক গ্যাস শেষ হলে উচ্চ দামে কেনা এলএনজির ওপরই নির্ভর করতে হবে গ্রাহককে। এতে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে শিল্পের উৎপাদন খরচসহ জীবনযাত্রার ব্যয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি আশঙ্কা করছি আগামী ১০ বছরের আগেই দেশে গ্যাসের মজুত ফুরিয়ে যাবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ গ্যাস অনুসন্ধানে যে ড্রিলিং শুরু করেছে এগুলোর কোনো ফল পাওয়া না গেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। এখন আমরা ৮০ ভাগ নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাস আর ২০ ভাগ আমদানিকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবহার করছি। কিন্তু গ্যাস ফুরিয়ে আসার সময় ঘনিয়ে এলে এবং নতুন কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে ২০৩০ সালের দিকে হয়তো ৮০ ভাগ এলএনজি ব্যবহার করতে হবে। ড্রিলিং এখন যা হচ্ছে তাতে হয়তো পরিস্থিতিতে সামান্য উন্নতি হতে পারে। কিন্তু সামনে চাহিদা আরও বাড়বে। তখন বেশি পরিমাণ এলএনজিও আমদানি করতে হবে। সেই সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে কি না দেখতে হবে। আমি মনে করি সে সামর্থ্য আমাদের নেই। এর অর্থ আমাদের টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে চলতে হবে। এতে শিল্প খাতকে ভুগতে হবে। কিছু গ্যাস গ্রাহক পাবে আর কিছু পাবে না।

গত ১৫ বছরে স্থলভাগে শুধু ভোলা ছাড়া আর কোনো বড় গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি। আবার এখানে গ্যাসের বড় মজুত থাকলেও পাইপলাইন না থাকায় এই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মজুত বাড়াতে এরই মধ্যে পুরনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে অনুসন্ধান কূপ, উন্নয়ন কূপ ও কূপ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্যাসের উৎপাদন কিছুটা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে পেট্রোবাংলা। আবার বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকার গ্যাস এখনো অধরাই রয়ে গেছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের মার্চে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক টেন্ডার ডাকে পেট্রোবাংলা। শুরুতে সাতটি বিদেশি তেল-গ্যাস কোম্পানি দরপত্রের নথি কিনলেও শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠানই সেই দরপত্র আর জমা দেয়নি|

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন করে দেশে বড় গ্যাসের মজুত পাওয়া না গেলে ২০৩১ সালের পর আমদানিকৃত এলএনজি দিয়েই চালাতে হবে। এতে সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে। সংস্থাটির তথ্য আরও বলছে, বর্তমানে দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০টি গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে। এ ছাড়া চারটি ক্ষেত্রে গ্যাসের মজুত পাওয়া গেলেও উত্তোলন করা যাচ্ছে না। আর পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন নানা কারণে বাতিল করা হয়েছে।

হাইড্রোকার্বন ইউনিটের তথ্য বলছে, গত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ২০ দশমিক ৮০ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস উৎপাদন করা হয়েছে। আর অবশিষ্ট মজুত আছে ৯ দশমিক ১২ টিসিএফ। বছরে সাধারণত এক টিসিএস গ্যাস উত্তোলন করা হয়। এতে অবশিষ্ট মজুত দিয়ে ১০ থেকে ১২ বছর ধরে উৎপাদন ধরে রাখা যেতে পারে। তবে গ্যাসের মজুতের এই সমীক্ষা ২০১০ সালের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি এই সমীক্ষা চালায়। একসময় দিনে আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস উৎপাদন করা হলেও এখন তা ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে।

দেশের সবচেয়ে বেশি মজুত থাকা গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদনও কমছে। হাইড্রোকার্বনের তথ্যে, এর মধ্যে হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের প্রাথমিক মজুত ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৩৮৩ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। এর উত্তোলনযোগ্য মজুত ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৭৫৫ বিসিএফ। এর মধ্যে গত জানুয়ারি পর্যন্ত উৎপাদন করা হয়েছে ৫ হাজার ৮২৭ বিসিএফ। আর সিলেটের জালালাবাদেও গ্যাসক্ষেত্রের প্রাথমিক মজুত ছিল ২ হাাজার ৭১৬ বিসিএফ। এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুত ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৪২৯ বিসিএফ। জানুয়ারি পর্যন্ত তোলা হয়েছে ১ হাজার ৬৩২ বিসিএফ। মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের প্রাথমিক মজুত ধরা হয়েছিল ৪৯৪ বিসিএফ। এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুত ধরা হয়েছিল ৪২৮ বিসিএফ। জানুয়ারি পর্যন্ত তোলা হয়েছে ৩৫১ বিসিএফ। এই হিসাবে মৌলভীবাজারের মজুত শেষের দিকে আর বিবিয়ানা ও জালালাবাদের মজুতও ফুরিয়ে যাওয়ার কথা। তবে বিবিয়ানা ও জালালাবাদে গ্যাসের মজুত বৃদ্ধির আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না দিলেও গত বছর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে গ্যাসের মজুত বৃদ্ধির তথ্য দিয়েছে শেভরন। মোট ৪৮১ বিসিএফ মজুত বেড়েছে বলে জানিয়েছে শেভরন।

পেট্রোবাংলা ও হাইড্রোকার্বন ইউনিটের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি পর্যন্ত সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড (এসজিএফএল)-এর পাঁচ গ্যাসক্ষেত্র মিলে অবশিষ্ট মজুত আছে ৫ টিসিএফের বেশি। অথচ এখান থেকে দিনে উৎপাদন করা হচ্ছে মাত্র ১১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ১৪টি কূপ আছে এসব গ্যাসক্ষেত্রে। আরেক সরকরি কোম্পানি বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল)-এর পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র মিলে মজুত আছে প্রায় ৩ টিসিএফ। কিন্তু দিনে তারা উৎপাদন করছে ৫৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট।

বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ